--  আমার বাংলা বই প্রকাশ সংক্রান্ত  --

 

 

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার বহুকাঙ্খিত নতুন বই “অপ্পো সপ্পো গালগপ্পো”, দশটি নির্বাচিত গল্পের সংকলন, এবারের কলকাতার বইমেলায় প্রকাশ করতে পারলাম না।

অনেক আশা ও স্বপ্ন ছিল - এই অজাত বই-শিশু মেলায় প্রথম দিনের আলো দখবে। কিন্তু বিধি বাম, তা খন্ডাবে কে?

গত ২০শে জানুয়ারি, নিজের এবং আমার কয়েকটি প্রিয় গোষ্ঠির ফেসবুকের দেয়ালে বই প্রকাশের খবরটা জানিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার শুভার্থীরা অকুন্ঠ শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও উৎসাহ দিয়েছিলেন, আমি যারপরনাই আপ্লুত হয়েছিলাম। অনেকে জানিয়েছিলেন, তাঁরা বইটা হাতে পাওয়ার ও পড়ার জন্য উদগ্রীব। কিন্তু আজ তাদেরকে আশাহত করতে গিয়ে আমি শুধু দুঃখিত নই, মর্মাহত। সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আশা রাখছি অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের আশা পূরণ করতে পারব।
ঐ প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দিয়েছিলাম যে কলকাতার এক প্রতারক প্রকাশকের খপ্পরে পড়ে বইটার প্রকাশনা অনিশ্চিত হয়ে আছে। গত সেপ্টেম্বরে আমি যখন তাকে কাজটা দিয়েছিলাম, কথা ছিল অক্টোবরের মধ্যে বই ছাপিয়ে সম্ভাব্য বিক্রেতাদের কাছে বিতরণ করে দেবে।

কিন্তু অগ্রিম টাকা পাওয়ার পর থেকে ক্রমাগত মিথ্যা বলতে থাকে ও কাজ শেষ হয়ে এসেছে বলে আশ্বাস দিতে থাকে। কিন্তু বহু সাধ্যসাধনা ও অনুরোধ করেও জানুয়েরির মাঝ (প্রায় চার মাসে)পর্যন্ত কোন কাজের নমুনা, প্রুফ বা বইয়ের প্রছদ দেখায়নি। বারবার ‘আজ দেব, কাল দেব’ করতে থাকে। জানুয়ারির মাঝামাঝি দেখা গেল, সে কিছুই করেনি, সবটাই ভাঁওতা, হাতে নাতে ধরা পড়ে গেল (সে লম্বা কাহিনি)। কোন প্রফ রিডার বা আর্টিস্টকেও কাজ দেয়নি। এমন কি, আমি পরে বাধ্য হয়ে নিজে তড়িঘড়ি প্রুফ রিড করে ও প্রচ্ছদের খসরা বানিয়ে পাঠিয়েছিলাম, সেগুলো্কেও সঙ্গে সঙ্গে কাজে লাগায়নি ও হারিয়ে বসে। মনে হয়, অগ্রিম নেওয়া টাকাও সব খেয়ে বসেছিল। অথচ, আরো টাকা আদায় করার অছিলায় ও আমার ওপর সমানে মেজাজ দেখিয়ে যাচ্ছিল। 

জানুয়ারির শেষে বইমেলা শুরুর হওয়ার দিন। দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি ওকে জানাই এক সপ্তাহের মধ্যে ফাইনাল প্রুফ ও কভার ডিজাইন না দেখালে, আমি বই বন্ধ করে দেব এবং প্রেসে ও সোশাল মিডিয়ায় ওর নাম ও বর্ণনা প্রকাশ করে দেব। ওর প্রুফ-সেটার (কন্ট্রাক্টার) ও কভার ডিজাইনার জানায় ওদেরকে মাত্র কয়েকদিন আগে কাজ দিয়েছে, আগে কিছুই দেয়নি। এত কম সময়ে ওদের পক্ষে ঠিকমত কাজ করা সম্ভব নয়। প্রুফ সেট করে তখন আমাকে যেটা দেখাল তাতে অকল্পনীয় ভুলভ্রান্তি ও অসম্পূর্ণ শব্দ ও লাইন রয়েছে। আমার কাছে প্রকাশক ও প্রুফ/ডিজাইনারের সাথে প্রতিটা কথোপকথনের প্রতিলিপি রয়েছে, প্রয়োজনে সেগুলোও ব্যবহার করতে পারি।

আমি যে এতটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারি প্রকাশক হয়ত সেটা ভাবেনি। ভেবেছিল, 'বিদেশি মানুষ, বই মেলায় নিজের বই ছাপার অক্ষরে দেখার ও লোককে দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে আছে।'

আমি যদিও বারবার ওকে বলেছি, আমি এর আগে দেশে ও বিদেশে ইংরেজি ও বাংলায় বই ও লেখা বার করেছি এবং সমস্ত বিষয়টা ভাল করেই জানি – ও পাত্তা দেয়নি।

শেষ পর্যন্ত, আমি নিজের আনন্দ পূর্তির জন্য এই অসাধু ব্যবসায়ীকে আর প্রশ্রয় দিতে পারলাম না। বই বন্ধ করে দিয়েছি জেনে ও তখন দিনে-রাতে অনুরোধ করে ইনিয়ে বিনিয়ে বিদেশে ফোন ও মেসেজ করতে থাকে।

ঠিক করেছি ভবিষ্যতে সম্ভব হলে অন্য কোন ভাল ও নির্ভরযোগ্য প্রকাশককে দিয়ে আগামী নববর্ষের বা পুজোর আগে বইটা প্রকাশ করব, অথবা পরের বই মেলাতে, তাই সই।

সকলের শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করি। 

আমি এই লম্বা বিবরণটা লিখলাম সকল ভবিষ্যত প্রকাশ-ইচ্ছুক লেখক-লেখিকাকে সম্ভাব্য বিপদ থেকে সতর্ক করার জন্যে, যাতে  আমার মতন অন্য কেউ যেন এরকম মিষ্টভাষী, কুমতলবী, প্রতারকের খপ্পরে না পরে।

*****

Library at doorstep

Book sharing Libraries