** গণতন্ত্রের উন্নয়নে বই পড়া, বই প্রচার, বই বন্টন ও লাইব্রেরির ভূমিকা ***
*** বই পড়া, প্রচার, বন্টন ও লাইব্রেরির ভুমিকা ***
এক রোববারে এক ঘরোয়া বৈঠকে বই পড়া নিয়ে কথা হচ্ছিল। ছাপার বই ও পত্র পত্রিকার দাম ক্রমশ বেড়েই চলেছে, যদিও তাদের মান কমে গেছে। ডিজিটাল মিডিয়ার সঙ্গে ছাপার বইয়ের কঠিন প্রতিযোগিতা, প্রকাশকদের কোনঠাসা অবস্থা, জনসাধারণের লাইব্রেরির অভাব ও তাদের করুণ অবস্থা, ইত্যাদি নিয়ে জোর আলোচনা চলছিল।
দেখা গেল, একটা বিষয়ে সকলে একমত, আজকালের দুর্মূল্যের বাজারে পুরো দাম দিয়ে নতুন বই বা পত্র-পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাগুলি কিনে পড়া্র ইচ্ছা, আর্থিক সামর্থ ও প্রন্তিক-উপযোগিতা, যাকে অর্থনীতির ভাষায় বলে মার্জিনাল ইউটিলিটি, বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের নেই। তার ওপর, আজকালের কুঠুরি-আবাসে, যেখানে পরিবারে সকলের জায়গা সংকুলানই কষ্টকর, সেখানে বই কিনে রাখবেই বা কোথায়? পুরানো বইয়ের দোকান বা পাড়ার লাইব্রেরীতে দেওয়া যায়, কিন্তু তাদের অনেকেরই একই সমস্যা। আর, অনামী বা মশলাহীন পুরানো বইয়ের কাটতিও তো কম। অগত্যা কাবাডি বা রদ্দিওয়লাই ভরসা। বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্তের দপ্তরে, নাকি, মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিতে, কোথায় যেন পড়েছিলাম, লেখক একদিন দেখেন তাঁর বইয়ের পাতা বা পত্রিকা দিয়ে এক সজ্জন জুতো মুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই দৃশ্যে লেখক ও কষ্টার্জিত পয়সা দিয়ে কেনা বইয়ের মালিকের মানসিক আঘাত অকল্পনীয়। ---
বিগত চার দশকে পশ্চিমের বেশ কয়েকটা উন্নত দেশে এ ব্যাপারে আমার সামান্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করার সুযোগ হয়েছে। লাইব্রেরি, সংগ্রহশালা, ঐতিহাসিক স্থান ও সৌধ ইত্যাদি ভ্রমন করা এবং সে সম্বন্ধে অল্প বিস্তর জানা, সেখানের কর্মীদের সাথে কথা বলা এক সময় আমার নেশার মত ছিল। তবে, ব্যক্তিগত জীবনে বারবার দেশ থেকে দেশান্তরে, স্থান ও আবাস পরিবর্তনের ফলে সেই সঞ্চয় ঠিকমত সামলে রাখতে পারিনি – তার বেশিটাই এখন শুধু স্মৃতি নির্ভর।
কলকাতার নমুনার ভিত্তিতে বললে, আমাদের দেশে জনসাধারণের লাইব্রেরির মাথাপিছু-সংখ্যা (Per capta) উন্নত দেশগুলির তুলনায় খুবই কম, আর যা ও আছে, তাদের অবস্থা মোটেও ভাল নয়। ২০১৮ তে আমি কলকাতার কয়েকটা পুরানো ও নতুন সরকারি-বেসরকারি, আঞ্চলিক ও পাড়ার ক্লাবের গ্রন্থাগা্রে সাধারণ নাগরিক হিসাবে ঢুঁ মেরেছিলাম। তার মধ্যে আমার দীর্ঘ পরিচিত পার্কস্ট্রিট পাড়ার এশিয়াটিক সোসাইটি-র গ্রন্থাগারও ছিল। সেই সব অভিজ্ঞতা খুব একটা আনন্দদায়ক হয়নি। নতুন বই, পত্র-পত্রিকা, আধুনিক সরঞ্জাম, সংরক্ষণের ব্যবস্থা ও কেনার অর্থিক সামর্থ্য খুবই অপ্রতুল মনে হয়েছিল। কিছু বই-অনুরাগী লোক, সামান্য কিছু উন্নত রুচির মানুষ, কিছু গবেষক ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া অনেক নামী লাইব্রেরিতেও নিয়মিত পাঠক বেশি যায় বলে মনে হল না। পাড়ার ক্লাবগুলি সরকারি অনুদান পেলেও তাদের অধিকাংশেরই কোন গ্রন্থাগা্র, এমন কী একটা বইয়ের আলমারি পর্যন্ত নেই। তাতে অবশ্য তাদের খুব একটা মাথা ব্যাথাও নেই।
সম্পাদনায় বাদ পড়া বা অতি সঙ্কো কুচিত প্রধাণ অংশ টা -- গণতন্ত্রের প্রধান মন্ত্রঃ বই, লাইব্রেরি ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রসার
আমার দেখা পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে বই পড়ার সামাজিক চিত্রটা কিছুটা এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সেখানে জনশিক্ষা, জ্ঞান প্রসার ও প্রচারের জন্য বই ও অন্যান্য মাধ্যমের যে বিরাট ভূমিকা ও গুরুত্ব আছে সেটা জাতীয়স্তরে বিশেষভাবে স্বীকৃত। একটা কথা সেখানে বার বার শুনেছি, গণতন্ত্রের সাফল্যের প্রাথম সোপান হল সাক্ষরতা। অর্থাৎ, জনগনকে অক্ষর জ্ঞন দেওয়া (Literate করা), যাতে তারা নিজেরাই বই, সংবাদ পত্র, টিভি, বিজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি পড়ে তাদের পারিপার্শিক, দেশ-দুনিয়া, ভাল-মন্দ ইত্যাদি সম্বন্ধে জানতে ও সজাগ হতে পারে।। এর ফলে মানসিকতার উন্নতি ঘটবে। জনসাধারণ শিক্ষিত না হলে তাদের জ্ঞান, বিশ্লেষণ ও বিবেচনা শক্তি তৈরী হবে না। আর তা না হলে তারা সরকার গঠনের ও পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রতিনিধিও নির্বাচন করতে পারবে না।
এই সব দেশে সকলেই একমত যে, শিক্ষা শুধু শিক্ষায়তনের ডিগ্রি, সার্টিফিকেট দিয়ে হয় না। শিক্ষায়তনের বাইরে নানাভাবে শিক্ষার প্রসার করা দরকার। যেমন, ছাপার অক্ষর, অর্থাৎ বই, পত্র-পত্রিকা এবং অডিও-ভিসুয়্যাল মিডিয়া, যেমন, টিভি, সিনেমা, রেডিয়ো, ইন্টারনেট ইত্যাদি
বর্তমান আধুনিক সমাজের উপকরণের মাধ্যমে। দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র এই পরিষেবাগুলো সহজলভ্য করা খুবই দরকার। সুদুর প্রাসারী ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জনগনকে সহজলভ্য বিনোদন দেয়। কিন্তু তার বাইরে তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। সেটা হল, সুষ্ঠ দেশ ও নাগরিক গড়ে তোলা। তাদের সদিচ্ছায় দেশ মজবুত হতে পারে, আবার তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় দেশ শীঘ্রই রসাতলে যেতে দেরি হবে না।
শেষের লাইনের সম্ভাবনাটা আমাকে বিশেষ ভাবে চিন্তিত করে। আমাদের দেশের বর্তমান নানা সঙ্কটের পিছনে কিছু নির্লজ্জ ও স্বার্থপর মিডিয়ার ব্যবসায়িক স্বার্থ প্রকট – সেটা আমাকে বিচলিত করে। দেশের বাইরে থেকে এগুলো বেশি করে চোখে ধরা পড়ে।
আমি এ দেশে আমার ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ও ইউনিভার্সিটিতেও গেছি। সেখানে কিছু ছাত্র, শিক্ষক ও অনেক অভিজ্ঞ লোকজনের সাথে পরিচয় হয়েছে। কিছু আলোচনাতেও যোগ করেছি, নিজেও ক্লাশ করেছি। তুলনামূলক ভাবে উন্নত দেশগুলিতে, পড়ার আগ্রহ, বই ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা দেখে অবাক হতে হয়। আধুনিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে ডিজিটাল মিডিয়া, যেমন, মোবাইল ফোন, কম্পুটার, টিভি ইত্যাদি হওয়াতে জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষা, জ্ঞান বিস্তার, খবর সরবরাহ ইত্যাদি অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবুও এখানে ছাপার বই, পত্র-পত্রিকা পড়ার চাল ও কদর কমেছে বলে মনে হয় না। নিত্য নৈমিত্তিক বই বা সেরকম কিছু পড়া বা শোনা এখানের বেশির ভাগ লোকের অভ্যাস। শিক্ষিত বন্ধু, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও পরিচিত মহলের মধ্যে বইয়ের আলোচনা, আদান-প্রদান (এক্সজেঞ্জ) লেগেই থাকে। তাছাড়া, পুরনো বইয়ের দোকান তো আছেই। //
আটের দশকে লন্ডনে স্থায়ী আবাসের সময়ে ওই একই রকমের ব্যবস্থা দেখেছি। মনে পড়ল, সে সময়ে আমার দুই মেয়ে সহ আমরা চারজনই আলাদা-আলাদা লাইব্রেরির মেম্বার ছিলাম। সাড়ে-তিন বছরের ছোট মেয়েরও আলাদা কার্ড ছিল। মেয়ে দুজন লাইব্রেরি যাওয়ার জন্য মুখিয়ে থাকত। ছোটজন লাইব্রেরিতে ঢুকেই বাচ্চাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘেরা এলাকায় ছুট দিত। মেঝেতে ঢালাও কার্পেটের ওপর বা ছোট ছোট টেবিল-চেয়ারে, খেলনা ছড়ানো। ওখান থেকে পছন্দমত ছবির বা কার্টুনের বই নিয়ে আপন মনে বসে বা আধা শোয়া হয়ে ছবির বই, নার্সারি রাইমসের বই দেখত - তখনও পড়তে শেখেনি। সেখানে নিচু শেলফে বাচ্চাদের নানান বই ও জিগ-স পাজ্লস, লেগো ব্লকস ইত্যাদি রাখা থাকত। কয়েক ডজন ছেলে মেয়ে সেখানে ওগুলো নিয়ে ব্যস্ত। কেউ বসে, কেউ শুয়ে, কেউ মুখে চুষিকাঠি দিয়ে, কেউ বোতল মুখে দিয়ে চুপচাপ নিজের মনে বই, বুদ্ধির খেলনা হাতরাচ্ছে।
মা-বাবারা আশে পাশে ঘেরার বাইরে থেকে নজর রাখছে। ছোটদের বই ইস্যু করার জন্য বড়দের কাউন্টারের পাশে আলাদা নিচু কাউন্টার ছিল – শুনেছিলাম সেটা করার একটা কারণ হল বই পড়ার ব্যাপারে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে স্বাবলম্বী করে তোলা। অনেক বাচ্চার হাত-মাথা ঠিকমত ডেস্ক পর্যন্ত পৌঁছাত না বলে সামনে আবার কাঠের তক্তার মত দুটো লাগান ছিল। পুচকেরা তাদের পছন্দের বই নিয়ে এসে, তক্তায় উঠে নিজের কার্ডের সাথে ডেস্কের ম্যাডামকে দিত। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডামও হাসি মুখে দুট কথা বলে বইগুলো ইস্যু করে তাদের হাতে দিয়ে দিত। অবশ্য তখন বডদের কাউকে পাশে থাকতে হত। এখন সে দৃশ্যগুলো চিন্তা করলে মজা লাগে। জানিনা এখনও সেসব ব্যবস্থা আছে কিনা। হয়ত তার থেকে অনেক ভাল ও উন্নত ব্যবস্থা হয়েছে। ওখানে বচ্চারা বইয়ের সাথে, এক রকম বইয়ের হাত ধরে বড় হয়।
জানিনা আমাদের দেশে এরকম সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা কবে হবে বা তার থেকে উন্নত কিছু হবে কিনা। শুনেছিলাম, দেশে কে যেন একজন বলেছিল, কলকাতাকে লন্ডন বানিয়ে দেবেন – সেই ছুঃমন্তর কবে যে ফলবে জানিনা? লন্ডন থেকে চাঁপাডাঙ্গা বা নিশ্চিন্দিপুর কতদূর তাও জানিনা।
** কানাডা ও আমেরিকায় বই পড়ার সামাজিক চিত্র **
এখানের সব অঞ্চলে ও পাড়ায় ছোট বড় পাবলিক ও কমিউনিটি লাইব্রেরি আছে – সবগুলোই ফ্রি। বড় লাইব্রেরিগুলো রোজ সকাল থেকে বেশ রাত পর্যন্ত খোলা থাকে, তবে সপ্তাহান্তে কিছুটা তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়। হাজার হাজার বই, গান, সিনেমা ও স্পোর্টসের সিডি, ডিভিডি সুন্দর করে সাজান ও ক্যাটালগ করা আছে। সারি সারি ইন্টারনেট সহ কম্পুটার রয়েছে– যে কেউ ব্যবহার করতে পারে। শ’খানেক লোক প্রায় সব সময় পড়ার ঘরগুলোতে পড়ছে। প্রাদেশিক লাইব্রেরি সবকটাই ইন্টারনেটে যুক্ত। সবাই সবার ক্যাটালগ ও যে কোন বইয়ের প্রাপ্তির অবস্থা জানতে পারে। যে কোন লাইব্রেরি থেকে অন্য লাইব্রেরিতে বই ধার করা যায়। শুধু এলবার্টা প্রদেশেই ১.৫ মিলিয়ান বই, সিডি, ডিভিডি আছে। এছাড়া এখানের লাইব্রেরি থেকে সদস্যরা বিনা পয়সায় নানান মিউজিক্যাল বাদ্যযন্ত্র ও আনুষঙ্গিক জিনিষপত্র দু সপ্তাহ পর্যন্ত ধার করতে পারে। এমন কী রান্নার ও বেকিংয়ের সরঞ্জাম, যেমন কিছু হাড়ি-কড়াই (পট্স আন্ড প্যানস), কেকের প্যানও ধার করা যায়। লাইব্রেরিতে প্রতি মাসে নতুন নতুন বই ও সরঞ্জাম যোগ হয়। নানা ভাষার বই, সিনেমা ও গানের ডিভিডি আছে – বাংলা ও হিন্দির বিশাল সংগ্রহ আছে। আমি এখানে দুই-বাংলার যত পুরানো ও নতুন বই দেখেছি ও পড়বার সুযোগ পেয়েছি, দেশে থাকার সময়ও তা পাইনি। দেশে এখন কী রকম অবস্থা তা প্রত্যক্ষ জানিনা।
যে কোন স্থায়ী বাসিন্দা এখানে লাইব্রেরির মেম্বার হতে পারে। মেম্বার এক সাথে ৯৯ টা (99) বই বা সিডি-ডিভিডি ধার করতে পারে এবং ২১ দিন পর্য্যন্ত রাখতে পারে। তারপরে ফোনে বা নিজে এসে আরও ২১ দিন করে তিনবার বাড়াতে পারে। যদি সে বইয়ের জন্য অন্য কেউ অনুরোধ দিয়ে থাকে, তাহলে দুই বা তিনবার বাড়ান যায়। বইয়ের তালিকা (ক্যাটালগ) বাড়িতে বসেই ইন্টারনেটে দেখা ও বই অর্ডার করা যায়। বই তৈরী হলে লাইব্রেরি থেকে ফোনে জানায় এবং গিয়ে তুলে আনতে হয়।
বই কনভেয়ের বেল্টে সোজা চলে আসে ইস্যু করার কাউন্টারে, সেখানে ইলক্ট্রিক স্ক্যানারে স্ক্যান হয়ে যায়। ফেরত দেওয়ার সময়ও তাই, দিন-রাতের যে কোন সময় ওপরের দিকে করে রেখে একটা শ্যুটে ফেলে দিতে হয়। আপনা থেকে স্ক্যান হয়ে চলে যায় ও প্রেরকের নাম থেকে বাদ হয়ে যায়। অনেক ডিজিটাল বই বাড়ি থেকেই পড়া যায়, আমি আজকাল বেশির ভাগ সময় তাই করি।
প্রাইমারি থেকে শুরু করে হাইস্কুল পর্যন্ত সব স্কুলের নিজের বড় ছিমছাম আধুনিক লাইব্রেরি আছে – এক স্কুল অন্য স্কুলের সঙ্গে তাদের স্কুল লাইব্রেরি নিয়ে বড়াই করে। বই ছাড়াও প্রত্যেক স্কুলের নিজস্ব অডিটরিয়াম, জিম, ইনডোর মাল্টি-স্পোর্টস সেন্টার, বিরাট খেলার মাঠ, মিউজিক সেন্টার, নিজস্ব মিউজিক ব্যান্ড, নানান খেলার টিম তো আছেই, যে গুলো নিয়ে এক স্কুল অন্য স্কুলের সাথে পাল্লা দেয় ও প্রতিযোগিতা করে।
** দুয়ারে-বইঃ পাড়ার মিনি-এক্সজেঞ্জ লাইব্রেরি **
আমাদের দেশের আজকালের জনপ্রিয় ধুয়া “দুয়ারে ইত্যাদি” সাগর মহাসাগর পেড়িয়ে পশ্চিমের দেশে এসেছিল কিনা জানিনা। নাকি, আমাদের মত এটা ওদেরও মস্তিস্ক প্রসূত? যেটাই হোক, ধুয়াটা কিন্তু খুবই ব্যাপক।
এখানে সম্ভ্রান্ত এলাকায় অনেকের সদর দরজার বাইরে দেখি একটা করে মিনি বই-এক্সচেঞ্জ লাইব্রেরি – কাঠের স্ট্যান্ডের উপর ছোট্ট কাঠের বাক্স দাঁড় করান, সামনে কাঁচের পাল্লা, ভিতরে গোটা ১০-১৫ টা পুরানো বই বা ম্যাগাজিন রাখা আছে, কোন তালা চাবি নেই - সবার জন্য অবারিত। যে কেউ ইচ্ছে করলে দেখে পছন্দমত বই নি্তে পারে বা বই রাখতে পারে। বই ফেরত দেওয়া, রাখার সময়সীমা ইত্যাদিরও কোন নিয়ম নেই - কেউ করে না মানা। পাড়ার বই-বন্ধুদের মধ্যে ভদ্রলোকের বোঝাপড়া রয়েছে, বই নিলে তখন বা পরে এসে বই রাখতেও হবে। বাক্সের ওপরে নতুনদের জন্য সংক্ষেপে কিছু লেখা থাকে। কেউ কেউ চিরকুটে ই-মেল বা ফোন নম্বর রেখে আসে, যদি কেউ প্রশ্ন বা আলোচনা করতে চায়। আমার সান্ধ্যভ্রমনের পথে আমি মাঝে মাঝে দু-একটা বই নেড়েচেড়ে দেখি, অনেক পুরানো আকর্ষনীয় বইও পেয়ে যাই।
বই বিনিময় ব্যাপারটা আমার খুব পছন্দ। নিচে দু-একটা ছবি দিলাম। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে আমি আমাদের কলকাতার আবাসনে এরকম একটা বই-ম্যাগাজিন পড়া, এক্সচেঞ্জ ও আলোচনা করার চক্র চালু করার চেষ্টা করেছিলাম।
আমার দুঃর্ভাগ্য, বিশেষ সাড়া পাইনি, বরং অনেক বিরোধিতা ও ব্যাঙ্গ পেয়েছিলাম। লাইব্রেরি তো দূরের কথা, একটা বড়সড় নোটিস বোর্ড বা দেয়াল পত্রিকা বার করার সমর্থন বা সহায়তা পর্যন্ত পাইনি। বেশির ভাগ আবাসিক এর প্রয়জনীয়তা দেখেন না, বরং ছাদে বসে নিছক গুলতানি ও আড্ডার পক্ষপাতি। হে মোর দুর্ভাগা দেশ!
জানিনা, আমাদের গণতন্ত্রে কবে সুর্যোদয় হবে।
অবশ্য, পুরান বই পড়া, বই বিনিময় ও হাত বদল করা ইত্যাদি যদিও আর্থিক ও পরিবেশ রক্ষার কারণে ইতিবাচক, এগুলোর একটা নেতিবাচক দিক আছে। সেটা হল, নতুন বই বাজারে যথেষ্ঠ বিক্রী না হলে লেখক, প্রকাশক ও ছাপার বইয়ের সাথে যুক্ত সকলের ব্যবসা ও জীবিকার উপর বিরাট কুপ্রভাব পড়বে। ভাল লেখা ও লেখক, ভাল বই ও পত্র-পত্রিকা বাজারে কমে যাবে। এটার বিশদ আলোচনা অবশ্য এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্যে নয়।
==== সম্পাদককে লেখা আমার প্রতিক্রিয়ার অংশ ====
দুঃখের বিষয়, আমার প্রবন্ধের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ন অংশটাই আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেল এবং সেটা ছেঁটে দিলেন। সেটা হল, যে কোন গণতন্ত্রের/দেশের সাফল্যের জন্য দরকারঃ
১) প্রথমে জনগণকে স্বাক্ষর করে তোলা, যাতে তারা নিজেরা পড়তে পারে। অন্যের কথার ঝাল না খায়।
২) তার পরের গুরুত্বপূর্ণ হল, সহজলভ্য, সুলভ নির্ভরযোগ্য সংবাদ, পর্যালোচনা, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞানের ছাপান অক্ষরের বই, পত্রিকা ইত্যাদি সরবরাহ করা, যেটা সবাই নিজে পড়ে স্বাধীন চিন্তা ভাবনা করতে পারে, সজাগ হতে ও যাচাই করতে পারে। অন্যের কথা বা টিভি সিরিয়ালের ব্যবসায়িক মাধ্যম দিয়ে নয়।
১০০% স্বাক্ষরতারও কোন মানে হয় না, যদি না উপযুক্ত ছাপানো (বা ডিজিটাল) বই, ইত্যাদি জনগনের সহজ নাগেলে থাকে। আমি এই নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা, লেখালেখি ও সভা সমিতিতে আলোচনা করি।
আমি খতিয়ে দেখলাম, পশ্চিমের দেশের গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধের পিছনে প্রধান মন্ত্র হল ছোটবেলা থেকে এই বই পড়া ও বই সরবরাহ করা। এই গভীর বাণীটা (গণতন্ত্রের প্রধান মন্ত্রঃ-- এবং আরো দুটো অনুচ্ছেদ) কী করে যে পুরো বাদ দিলেন জানি না (অন্তত সারাংশ দেওয়া যেত) – আর লেখাটার পরিবর্তিত শীর্ষক ‘কিতাবনামা’ এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্যটাই বহন করে না।
আর আমার পাঠান মিনি লাইব্রেরির ছবিটার নিচে ক্যাপশান দিয়েছেন, “নিউ ইয়র্কের রাস্তার ধারে ‘দ্য লিটল ফ্রি লাইব্রেরি” – এই তথ্য কোথায় পেলেন জানিনা। এটা কানাডায় (ক্যালগরি শহরে) আমার এক মার্জিত প্রতিবেশীর বাড়ির সামনে আমার ক্যামেরায় ২১/৭-এ তুলে লেখার সাথে লাগিয়েছিলাম। তাকে দেখাতে, সে হেসে খুন, আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমের ওপর একটা অপ্রিয় মন্তব্য করেছিল। সেটা সত্যি মনে হলেও, আমার ভাল লাগেনি।
It is a long established fact that a reader will be distracted by the readable content of a page when looking at its layout. The point of using Lorem Ipsum is that it has a more-or-less normal distribution of letters, as opposed to using 'Content here, content here', making it look like readable English. Many desktop publishing packages and web page editors now use Lorem Ipsum as their default model text, and a search for 'lorem ipsum' will uncover many web sites still in their infancy. Various versions have evolved over the years, sometimes by accident, sometimes on purpose (injected humour and the like).